প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় | কি কি খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পায় ?

মা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন
নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য।

প্রথম ৬ মাস শিশুর জন্য প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে নিরাপদ এবং সম্পূর্ণ খাবার। তবে অনেক সময় দেখা যায়, মায়েরা দুধ কম হওয়ার ভয়ে আগেই বিকল্প পথ বেছে নেন। নবজাতক শিশুর সঠিক পুষ্টির জন্য মাতৃদুগ্ধ বা ব্রেস্ট মিল্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মা দুধ কম হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো বুকের দুধ বা ব্রেস্ট মিল্কের পরিমাণ কীভাবে বাড়ানো যায়—সরাসরি ১০টি কার্যকর টিপসের মাধ্যমে।

১. বাচ্চাকে ঘন ঘন সাক করানো

বাচ্চা যত বেশি সাক করবে, তত বেশি দুধের উৎপাদন বাড়বে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই যদি বাচ্চা কম সাক করে, তাহলে দুধ উৎপাদনও কমে যাবে। ফর্মুলা দুধের উপর নির্ভর না করে বারবার বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করান।

২. হাইড্রেশন নিশ্চিত করুন

প্রতিদিন অন্তত ৬ লিটার পানি পান করুন। দুধ খাওয়ানোর আগে ৫০০ এমএল থেকে ১ লিটার পানি খেয়ে নিন। এটি শুধু দুধ বাড়ায় না, মায়ের শরীরের ডিহাইড্রেশন সমস্যাও কমায়।

৩. বাচ্চাকে প্রথম ঘণ্টার মধ্যে দুধ দিন

নর্মাল ডেলিভারিতে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে এবং সিজার হলে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করান। এতে দুধের প্রবাহ দ্রুত শুরু হয় এবং বাচ্চার সাকিং রিফ্লেক্স উন্নত হয়।

৪. সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করুন

মায়েদের সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি ও ফলমূল খাদ্যতালিকায় রাখুন। খালি পেটে দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। ভরা পেটে খাওয়ালে মা ও শিশু দুজনেই আরাম পায়।

৫. গ্যালাক্টোগগ খাবার গ্রহণ করুন

দুধ, সাবু, রসুন, কালোজিরে, বাদাম ইত্যাদি গ্যালাক্টোগগ হিসেবে পরিচিত। যেমন দুধে সাবু জ্বাল দিয়ে খেলে দুধ বাড়ে। রসুন ও কালোজিরে সরষের তেলে ভেজে খাওয়া যায়।

৬. প্রচুর প্রোটিন গ্রহণ করুন

মাছ, চিংড়ি, কাকড়া, ডিম, মাংস প্রোটিনে ভরপুর। এগুলো দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার যেমন দুধ, দই, খোয়া খেতে পারেন।

৭. বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি

মায়েদের মানসিক চাপ কম থাকা দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম ও ইতিবাচক মনোভাব দুধ উৎপাদনে সহায়ক। আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্রেস্টফিড করান।

৮. শিশুর সিগন্যাল অনুযায়ী খাওয়ান

শিশু যখনই খেতে চাইবে তখনই দুধ খাওয়ান। শিশুর চাহিদা উপেক্ষা করা যাবে না। ঘন ঘন খাওয়ানোতেই দুধ বাড়ে।

৯. অন্যের কথা শুনে দমে যাবেন না

অনেকে বলবে যে দুধ কম, বাইরের দুধ দিন। এটা শুনে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। আপনার দুধই যথেষ্ট এবং শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো।

১০. হরমোন ও দুধ উৎপাদনের সম্পর্ক বুঝুন

বাচ্চা যখন সাক করে, তখন মায়ের মস্তিষ্কে হাইপোথ্যালামাস থেকে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড অক্সিটোসিন ও প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসরণ করে। এই দুটি হরমোনই দুধের উৎপাদন এবং নিঃসরণে সাহায্য করে।

গরমে শিশুর যত্ন:১০টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

গ্যালাক্টোগগ খাবার: রসুন, বাদাম ও দুধ
বুকের দুধ বৃদ্ধিতে গ্যালাক্টোগগ খাবার যেমন রসুন, বাদাম ও দুধ অত্যন্ত উপকারী।

শেষ কথা

আপনার বুকের দুধ পরিমাণে এবং গুণে যথেষ্ট। কেবলমাত্র কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনি সফলভাবে শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিড করাতে পারবেন। বাইরের দুধ বা জল না দিয়ে নিজের দুধকেই বাচ্চার একমাত্র খাদ্য হিসেবে নিশ্চিত করুন।

শিশুর পূর্ণ বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে মায়ের দুধই সবচেয়ে উপযোগী। তাই নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান এবং শিশুর চাহিদা অনুযায়ী বারবার দুধ দিন। কোনো অবস্থাতেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে ফর্মুলা দুধ বা বোতলের ওপর নির্ভর করবেন না।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: বুকের দুধ কম হলে কী করব?

বাচ্চাকে ঘন ঘন খাওয়ান, পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। চিন্তা মুক্ত থাকুন ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

প্রশ্ন ২: গ্যালাক্টোগগ খাবার কী?

যেসব খাবার দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যেমন মেথি, রসুন, বাদাম, ওটস, খেজুর, দুধ ইত্যাদি — এসবকে গ্যালাক্টোগগ বলা হয়।

প্রশ্ন ৪: দুধ খাওয়ানোর সময় মা কী খেতে পারেন?

প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, মাছ, সবজি, ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। হালকা স্ন্যাকস যেমন চিড়া, বাদাম খাওয়াও উপকারী।

প্রশ্ন ৫: কোন খাবার খেলে বুকের দুধ বাড়ে?

মেথি, রসুন, ওটস, খেজুর, বাদাম, দুধ, সবুজ শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ে।

প্রশ্ন ৬: মেথি কিভাবে খেলে বুকের দুধ বাড়ে?

মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন অথবা চায়ের মতো পান করেও খাওয়া যায়। এটি দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে।

প্রশ্ন ৭: রসুন খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে?

হ্যাঁ, রসুন গ্যালাক্টোগগ হিসেবে কাজ করে। রান্নায় রসুন ব্যবহার করা বা কাঁচা রসুন অল্প করে খাওয়া দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৮: মায়ের বুকের দুধ কীভাবে তৈরি হয়?

হরমোন ‘প্রোল্যাকটিন’ এবং ‘অক্সিটোসিন’ এর সাহায্যে মা’য়ের দেহে বুকের দুধ তৈরি হয়। বাচ্চা যখন স্তন্যপান করে, তখন এই হরমোনগুলো সক্রিয় হয়ে দুধ উৎপাদন ও নিঃসরণে কাজ করে।

প্রশ্ন ৩: ব্রেস্ট মিল্ক বাড়ানোর জন্য কোনো ওষুধ প্রয়োজন আছে কি?

সাধারণত প্রয়োজন হয় না। খাদ্য ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেই দুধ বাড়ে। তবে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।



নোট: এই পোস্টটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে। প্রকৃত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Next Post Previous Post