গরমে শিশুর যত্ন: এই প্রচণ্ড গরমে আপনার শিশুকে সুস্থ রাখার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

চলতি বছরের প্রচণ্ড গরমে শিশুদের শরীর অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়েছে। বাড়ছে হিটস্ট্রোক, জ্বর, কাশি ও পানিশূন্যতা। তাই এই সময়ে শিশুদের সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আজকের পোস্টে আমরা জানবো কিভাবে গরমকালে নবজাতক থেকে শুরু করে ৭ মাস বয়সী শিশুর যত্ন নেওয়া যায়।
গ্রীষ্মকালে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা খুব সহজেই বেড়ে যেতে পারে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাপমাত্রার তারতম্যে শিশুরা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যারা ১ থেকে ৭ মাস বয়সী। তাই শিশুকে হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরানো, ঘর ঠান্ডা রাখা এবং পর্যাপ্ত তরল খাবার দেওয়া এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন
নবজাতকদের ত্বক নরম ও সংবেদনশীল। এদের সবসময় ঠান্ডা, পরিষ্কার এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘাম না জমে। নবজাতকের কাপড় অবশ্যই সুতির হতে হবে এবং প্রয়োজনে দিনে দুইবার গোসল করানো যেতে পারে।
তীব্র গরমে নবজাতকের ত্বকে ঘামাচির সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই নিয়মিত পরিষ্কার ও শুকনো রাখা অত্যন্ত জরুরি। কাপড় ধোয়ার সময় হালকা ও নিরাপদ বেবি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা উচিত এবং কাপড় যেন রোদে ভালোভাবে শুকানো হয়। নবজাতককে সরাসরি রোদে নেওয়া উচিত নয়, বরং হালকা আলোযুক্ত ও বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখাই উত্তম।
১ মাস বয়সী শিশুর যত্ন
এই বয়সে শিশুর ত্বকে গরমে র্যাশ দেখা দিতে পারে। এজন্য শিশুকে হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে। অতিরিক্ত গরমে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। ঘাম ভেজা কাপড় পরিবর্তন করুন ও পানিশূন্যতা থেকে বাঁচাতে বুকের দুধ বেশি করে খাওয়াতে হবে।
৩ মাসের শিশুর যত্ন
৩ মাসে শিশুর মেটাবলিজম বেড়ে যায়, ফলে ঘাম বেশি হতে পারে। ফ্যানের নিচে না রেখে হালকা বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে। শিশুর খাবারে সতেজতা বজায় রাখা ও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৭ মাসের শিশুর যত্ন
৭ মাস বয়সী শিশু সাধারণত হামাগুড়ি দেয় এবং বেশি নড়াচড়া করে। তাই ঘর ঠান্ডা ও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। শিশুকে ডাবের পানি, লেবুর শরবত এবং ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। তবে বাইরের নষ্ট খাবার একেবারেই না।

এই গরমে শিশুকে সুস্থ রাখতে করণীয় ১০টি পরামর্শ:
- রোদে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।
- গরমে ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পোশাক পরিবর্তন করুন।
- আরামদায়ক, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরান।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খাওয়ান।
- নষ্ট খাবার একেবারে খাওয়াবেন না।
- প্রতিদিন ২ বার গোসল করাতে পারেন।
- শিশুর ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
- অতিরিক্ত ঘামে ফুসকুড়ি হলে পাউডার বা ডাক্তারি পরামর্শ নিন।
- রোদে বের হলে ছাতা বা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- ঘরের এসি বা ফ্যানের তাপমাত্রা শিশুর জন্য আরামদায়ক রাখুন।
গ্রীষ্মের গরমে শিশুর যত্নে মায়ের করণীয় কি?
শেষ কথা
এই গরমে শিশুর যত্ন নেওয়া শুধু দরকারি নয়, বরং একান্তই আবশ্যক। নবজাতক থেকে শুরু করে বড় শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত পানি, সঠিক পোশাক এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখলে অনেক জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সুতরাং প্রতিদিনের যত্নে শিশুকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখুন।
গ্রীষ্মকালে শিশুদের সুস্থ রাখতে হলে শুধু বাইরের যত্ন নয়, ভেতরের পুষ্টির দিকেও নজর দিতে হবে। মাতৃদুগ্ধপানকারী শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর ও ঠান্ডা প্রভাবযুক্ত খাবার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। বড় শিশুদের ঠান্ডা জাতীয় পানীয়, যেমন ডাবের পানি বা লেবুর শরবত, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হবে এবং শিশুরা সজীব থাকবে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
১ মাসের বাচ্চার কি করা উচিত?
১ মাসের শিশুর ক্ষেত্রে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।
১ মাসের শিশুর গড় ওজন কত?
একজন ১ মাস বয়সী শিশুর গড় ওজন সাধারণত ৩.৫ থেকে ৪.৫ কেজি হয়ে থাকে, তবে এটি জন্মের ওজন ও দুধ খাওয়ার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।
নবজাতক শিশু দিনে কত ঘন্টা ঘুমায়?
নবজাতক শিশু সাধারণত দিনে ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়, তবে এটি ছোট ছোট বিরতিতে বিভক্ত হয়।
নবজাতক জন্মের পর কী কী করণীয়?
জন্মের পর শিশুকে পরিষ্কার করা, ওজন নেওয়া, বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা, ভিটামিন K ইনজেকশন দেওয়া এবং জন্ম সনদ তৈরি করানো জরুরি।
নবজাতক শিশুর সর্দি হলে কী করণীয়?
শিশুকে গরমে রাখা, বুক ও মাথা ঢেকে রাখা এবং ডাক্তারের পরামর্শে নরমাল স্যালাইন বা ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।
নবজাতকের ঢেকুর না উঠলে কী করণীয়?
দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধে রেখে পিঠে হালকা চাপ দিলে ঢেকুর উঠতে সাহায্য করে। না উঠলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার চেষ্টা করা উচিত।
নবজাতকের গায়ের রং কেন পরিবর্তিত হয়?
জন্মের পর শিশুর গায়ের রং অস্থায়ীভাবে বদলে যেতে পারে। এটি সাধারণত রক্তপ্রবাহ, জন্ডিস বা ত্বকের প্রাকৃতিক অভিযোজনের কারণে হয়ে থাকে।
নবজাতকের নাভিরজ্জু কত দিনে পড়ে যায়?
সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে নবজাতকের নাভিরজ্জু শুকিয়ে পড়ে যায়। এর মধ্যে পরিষ্কার ও শুকনো রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
নবজাতক শিশুকে কত দিন পর গোসল করাতে হয়?
জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন শিশুকে স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়। পুরোপুরি গোসল করানো যায় সাধারণত নাভিরজ্জু পড়ে যাওয়ার পর।
নোট: এই পোস্টটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে। প্রকৃত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।