কোষ্ঠকাঠিন্য: ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম | দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়ি
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কার্যকর উপায়

আমাদের দেশের অনেক মানুষই আজকাল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন। এটি এমন এক সমস্যা, যা একদিকে যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে দেহের বিভিন্ন জটিল রোগেরও জন্ম দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য কেবলমাত্র পেটের একটি সমস্যা নয়, বরং এটি পুরো জীবনযাত্রাকেই প্রভাবিত করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য মানে হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ে মলত্যাগে ব্যাঘাত ঘটানো। দিনে একবার না হওয়া বা সপ্তাহে তিন বারের কম মলত্যাগের ঘটনা থাকলে সেটিকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। মল শক্ত ও শুকনো হয়ে যায় এবং ত্যাগ করতে কষ্ট হয়।

দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

১. প্রচুর পানি পান করুন – দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
২. আঁশযুক্ত খাবার খান – ব্রাউন ব্রেড, ওটস, ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৩. চলাফেরা করুন – হালকা হাঁটাচলা ও ব্যায়াম হজমে সাহায্য করে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম – ঘুম কম হলে হজমের সমস্যা বেড়ে যায়।
৫. সকালের প্রথম কাজ – প্রতিদিন এক নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

  • গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খান
  • তোকমা বা চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খান
  • পাকা কলা, পেঁপে, আমড়া ও কাঁচা আম খান
  • গুড় ও গরম দুধ রাতে খাবারের পর খেতে পারেন
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম

যদিও ঘরোয়া পদ্ধতি সর্বোত্তম, তবুও কিছু ওষুধ বা সিরাপ আছে যেগুলো ডাক্তারি পরামর্শে নেওয়া যায়।
Duphalac Syrup (ল্যাক্টুলোজ)
Lactul Syrup
Cremaffin Plus
সতর্কতা: এগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কোষ্ঠকাঠিন্য ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার একটি খুবই কার্যকর উপায়।
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১-২ চামচ ইসবগুল মিশিয়ে রাতে খাবারের পরে খান।
খাওয়ার পরে আবার এক গ্লাস পানি পান করুন।
ইসবগুলের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো কাজ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি কি সমস্যা হয়

  • পেটে ব্যথা ও গ্যাস
  • মাথাব্যথা ও মেজাজ খারাপ
  • হেমোরয়েডস (অর্শ/পাইলস)
  • মুখে দুর্গন্ধ ও অজীর্ণতা
  • মনমেজাজ খারাপ ও ঘুমের সমস্যা

পুরাতন আমাশয় রোগের ঔষধ | বাচ্চাদের আমাশয় হলে করণীয় কি

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি বাচ্চার ক্ষতি হয়

গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সাধারণ সমস্যা। হরমোন পরিবর্তনের কারণে অন্ত্রের কার্যক্রম ধীর হয়ে যায়। এতে মায়ের অস্বস্তি বেড়ে যায়। যদিও এটি সরাসরি শিশুর ক্ষতি করে না, তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে পাইলস ও ইউটেরিন সংকোচন হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট পরিবর্তন ও ওষুধ গ্রহণ জরুরি।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচার জন্য করণীয়

  • নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়ানো
  • প্রতিদিন একই সময়ে টয়লেট ব্যবহার
  • সঠিক পানি ও ফাইবার গ্রহণ

উপসংহার

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি ছোট সমস্যা মনে হলেও, অবহেলায় এটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। প্রাকৃতিক উপায় ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা গ্রহণ করে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, প্রতিদিনের খাবার ও পানির অভ্যাসই কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান কী?

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হল পর্যাপ্ত পানি পান করা, আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা।

পায়খানা না হলে কি ওষুধ খেতে হবে?

পায়খানা না হলে সাধারণত ইসবগুল, সাইনোকট, ল্যাক্সাটিভ সিরাপ বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ডোজের কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে দীর্ঘ সময় সমস্যায় ভোগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ কি?

কোষ্ঠকাঠিন্যের সাধারণ ঔষধগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসবগুলের ভুষি, ল্যাক্সা সিরাপ, ডুলকোল্যাক্স ট্যাবলেট, ল্যাকটুলোজ সিরাপ ইত্যাদি। যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিদিন পায়খানা না হওয়ার কারণ কী কী?

প্রতিদিন পায়খানা না হওয়ার কারণগুলো হতে পারে: অল্প পানি পান করা, আঁশবিহীন খাবার খাওয়া, মানসিক চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বা খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম।

Next Post Previous Post